গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল, তেজগাঁও, ঢাকা (বিদ্যালয় পরিচিতি)

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ৪টি টেকনিক্যাল হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ; যার অন্যতম হল গভঃ টেকনিক্যাল হাইস্কুল, তেজগাঁও,ঢাকা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আয়ন-ব্যয়নসহ যাবতীয় সকল দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে স্কুলটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত করা হয়। সাথে প্রধান শিক্ষকের পদটি আপগ্রেডেড করে অধ্যক্ষ করা হয়। ফলে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ ১৮ বৎসর অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অবসর পরবর্তীতে নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষগণ সকল দায়িত্ব পালন করেন। এনাম কমিটির সুপারিশক্রমে বিদ্য্যালয়ের সাথে কলেজ চালু হওয়ার সময় বিদ্যালয়টির নাম হয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজ(স্কুল শাখা)। ১৯৯১ সালে সরকার ৬২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালু করলে অত্র বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালু হয়। এ সময় অধ্যক্ষ কলেজ ও বিদ্যালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২৩/০৫/১৯৯৬ সালে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য জনাব রিজিয়া খানমকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা থেকে যায় অধ্যক্ষের হাতে। এর ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ আব্দুল আজিজ বিদ্যালয়ের যাবতীয় আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা সম্বলিত একটি আদেশ প্রাপ্ত হন। এসময় বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল। মূলতঃ এ সময় থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলাদা প্রশাসনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু একই ক্যাম্পাসে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল নামে আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান একসাথে পরিচালিত হতে থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এবং বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে নাম জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে। নাম জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ১৩/০৩/২০১৯ তারিখে যোগদানকৃত প্রধান শিক্ষক জনাব রহিমা আক্তার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পেশ করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪/১২/২০১৯খ্রিঃ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭১.৩৩.৭২৪.১৯-১২৮৯ এর আদেশের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনপূর্বক গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুল, তেজগাঁও, ঢাকা নামকরণ করা হয়। বিদ্যালয়টির পরিবেশ নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর। বিদ্যালয়টির জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, ম্যাট্রিকুলেশন এবং পরবর্তীতে এসএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রায়ই মেধা তালিকায় ১ম স্থানসহ বিভিন্ন স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেছেন। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতেও প্রায় প্রতি বছরই শতভাগ পাশের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জিপিএ- ৫ পেয়ে আসছে। শুধুমাত্র সৌন্দর্য, বিশালত্ব এবং শিক্ষা-দীক্ষায়ই নয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিদ্যালয়টির যে ঐতিহ্য তা অনেকটা প্রবাদে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাত্যহিক সমাবেশ, মিলাদ মাহফিল, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মেধা পুরস্কার , সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিদায় সংবর্ধনা, শিক্ষা সফরসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য আন্তঃস্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতি কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়টি সাঁতারে উপ অঞ্চল চ্যাম্পিয়ন, ক্রিকেট ও ফুটবলে থানা ও অঞ্চল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়া বিদ্যালয়টি দ্ইু বছর যাবৎ জাতীয় বিতর্ক ফেস্ট সফলতার সাথে আয়োজন করে আসছে। সুনিয়ন্ত্রিত জীবনবোধ ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট এর সদস্যরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশ, নৈতিকতাবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ সর্বোপরি জীবনবোধ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত কস্পিউটার ল্যাব ও আইএলসি ক্লাসরুম এবং ২টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে অর্ধ-বার্ষিক/বার্ষিক/নির্বাচনি পরীক্ষার ফল তৈরি করেন। ঢাকা শহরের ৪০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিদ্যালয়টি অন্যতম। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থীর শিখন-শেখানো কৌশল বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে ৪৭জন উচ্চ শিক্ষিত ও সু-প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা। সব মিলিয়ে একটি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশে অত্যন্ত সুচারুরূপে গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে।